খোরশেদ আলম কাসেমি : জালালি তবিয়ত নাকি অহংকার?


কওমি ভিশন প্রকাশের সময় : অক্টোবর ৫, ২০২৩, ৮:১০ পূর্বাহ্ন
খোরশেদ আলম কাসেমি : জালালি তবিয়ত নাকি অহংকার?

সম্প্রতি নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখায় যায়, প্রসিদ্ধ বক্তা মাওলানা খোরশেদ আলম কাসেমী একজন তরুণ আলেমকে শের ভুল করার অভিযোগে প্রকাশ্যে মঞ্চে ধমকাচ্ছেন। শের পড়ার আগে উনার নাম না নেয়াকে দোষ হিসেবে দেখছেন তিনি।  উপস্থিত জনতার সামনে দীর্ঘক্ষণ সেই বক্তাকে জাহিল মূর্খ বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে দেখা যায়। এ প্র্রসঙ্গে আরো একটি ভিডিও সামনে আসে তার। সেখানে দেখা যায়, একটি মাহফিলের পোস্টারে তার নামের উপরে মাওলানা ইয়াহইয়া মাহমুদের নাম দেয়ায় মাহফিল কমিটির উপর চটে বসে আছেন। তার নামের উপর অন্য বক্তার নাম দেয়াকে ‘কবিরা গুনাহ’ বলেও উল্লেখ করেন । তার এমন ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণে ক্ষুদ্ধ ও হতবাক সাধারণ মানুষ। একজন বরেণ্য আলেম থেকে এমন অসৌজন্যমূলক আচরণ কামনা করেন না কেউ।

ফেসবুক পোস্টে লেখক ও অনুবাদক মাওলানা লিসানুল হক বলেন, জালালি তবিয়তের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে জনাব। জালালি তবিয়ত মানে ব্যক্তির সঠিক নীতি, আদর্শ ও স্বভাববিরুদ্ধ কোনো কাজ দেখে গেলে তৎক্ষণাৎ রাগ প্রদর্শন, বকাঝকা বা ধরপাকড় করা। এতে তুচ্ছতাচ্ছিল্য, গালাগালি বা অপমানিত হবার মতো কোনো শব্দ থাকে না। বরং খোদ অপরাধী লজ্জিত ও অনুতপ্ত হতে বাধ্য হয়।

দারুল উলুম হাটহাজারীর বার্ষিক সভায় দারুল উলুম দেওবন্দের মুহতামিম মাওলানা আবুল কাসেম নোমানী সাহেব হাফিযাহুল্লাহ বয়ানের জন্যে মঞ্চে উঠলেন। বাদ জুমা। তৎক্ষণাৎ অসংখ্য মোবাইল তাঁর ছবি ও ভিডিও করতে শুরু করে দিলো। হযরত প্রথমে স্বাভাবিকভাবে নিষেধ করলেন। তবু যখন দেখা গেলো যে কেউ নিষেধ মানছে না তখন তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন, আপনারা যদি এভাবে ছবি তুলতে থাকেন তাহলে আমি এক্ষুনি মঞ্চ ছেড়ে চলে যাবো।
রাগ এখানে ভালো কাজ দিলো। তৎক্ষণাৎ সব মোবাইল নিচে নেমে গেলো। কিন্তু কেউ অপমানিত হলো না। বরং হযরতের প্রতি দর্শক শ্রোতাদের ভক্তি ও শ্রদ্ধা আরও বৃদ্ধি পেলো।

লেখক আলেম মাওলানা আবুল কাসেম আদিল লিখেন, বড়দের ছোটলোকি দেখে যাচ্ছি। বয়সে তিন বছরের বড়, তিন মাদরাসার শায়খুল হাদীস— এজন্য তার নাম উপরে দিতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটায় একজন প্রবীণ আলেম আয়োজকদের প্রকাশ্যে যে ভাষায় তুলোধুনা করেছেন, তা দেখে আশ্চর্য হলাম।

আরেকটা ক্লিপ দেখলাম, তিনি বলছেন, আমার শের পড়েছে অথচ আমার নামটাও বলে নি। আমি জানি না, তিনি শেরগুলোর লেখক কি না। যদি লেখক হয়ে থাকেন, তাহলে এতদিনে কবি-স্বীকৃতি পাওয়ার কথা। তিনি না লিখে থাকলে এর স্বত্ব দাবি করলেন কীভাবে?
বর্তমানের তরুণ আলেমদের অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতির কথা শুনি, সুযোগমত এর সমালোচনাও করি। আমার নিজেরও অনেক বিচ্যুতি আছে। আমরা যথেষ্ট সংযমী নই, সহনশীলতার অভাব আমাদের মধ্যে প্রকট। কিন্তু আমাদের মুরব্বিরা কি আমাদের সামনে অনুসরণীয় উদাহরণ রেখে যাচ্ছেন?
মুফতি রিজওয়ান রফিকি বলেন,  সকল মাহফিলের পোস্টার বক্তাদের নাম বিহীন করা হোক। তাহলে বক্তা শ্রোতা উভয়ের ইখলাস ঠিক থাকবে। কেউ বক্তা দেখে আসবে না, কারো নাম ওপরে নিচে থাকলে কস্টও পাবে না। এটা একান্তই আমার ব্যক্তিগত অভিমত।
লেখক, অনুবাদ ও সম্পাদক মাওলানা জহির উদ্দিন বাবর বলেন, ‘কথা কয় না কেন’, ‘কথা কন’ বলে শ্রোতাদের ধমক মারা চরম অসভ্যতা। এটা যিনিই করুন, তার আদব শেখার প্রয়োজন আছে।
তরুণ আলেম মাওলানা মুহাম্মদ ফাহিম সিদ্দিকি বলেন, বক্তাদের আচরণগত ত্রুটি এদেশে দাওয়াতের অঙ্গনটাকেই নষ্ট করে দিচ্ছে। শ্রোতাদের স্বীকারোক্তি আর সমর্থন আদায় বর্তমানে রীতিমতো অশোভনীয়, বিরক্তিকর একটা দুষ্ট ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাক্যের শেষে বলা হয়, ঠিক কি না? কথা কয় না? ‘কথা কয় না কেন’, সুবহানাল্লাহ জোরে কন!!’কথা কন’!! বলে শ্রোতাদের রীতিমত ধমকানো চরম অসভ্যতা। এটা যিনিই করছেন, তাঁর আদব শেখার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি। এসব নববী আখলাকের কোন সীমার মধ্যেই পরেনা।