মিলাদ কেয়াম : আব্বাসির আকিদা, উলামায়ে কেরামের অবস্থান ও আমাদের করণীয়


কওমি ভিশন প্রকাশের সময় : মে ২১, ২০২৩, ২:২৬ অপরাহ্ন
মিলাদ কেয়াম : আব্বাসির আকিদা, উলামায়ে কেরামের অবস্থান  ও আমাদের করণীয়

ওবাইদুল্লাহ ওবাইদ

আব্বাসি যতবারই আলোচনায় আসেন, তার বিদয়াতি আকিদা প্রসঙ্গে প্রশ্ন ওঠে। মিলাদ কেয়ামের পক্ষে আব্বাসির জোরালো ভূমিকা সবসময় লক্ষ করা যায়। মিলাদ কেয়ামের বিপক্ষে উলামায়ে হক্কানির যারাই কথা বলেছেন সবাইকে খুব কট্টর ভাষায় জবাব দিতে পিছপা হয়নি আব্বাসি। বলতে গেলে আব্বাসির চিন্তাদর্শনের বিরুদ্ধে যে যে কথা বলবে তাকে অত্যন্ত দাম্ভিক ও তাচ্ছিল্যের ভাষায় সে জবাব দেয়।

মিলাদ কেয়াম সম্পর্কে তার অবস্থান জানতে অনলাইন একটু ঘাটাঘাটি করে যা বুঝলাম, আব্বাসি মিলাদ কেয়ামকে মুস্তাহাব মনে করেন। যারা মিলাদ করে না তাদের নিন্দা করেন না। কিন্তু যারা মিলাদের বিরোধিতা করেন বিদয়াত ও শিরিক বলেন তাদের তাচ্ছিল্যের সাথে তুলোধুনো করতেও ছাড়েন না। এমনকি দেশের শীর্ষস্থানীয় আলেমদের শানেও সে কটুকথা বলতে দ্বিধা করে না।

উলামায়ে হক্কানি মিলাদ কেয়ামকে শিরিক মনে করেন এজন্য, মিলাদের মজলিসে রাসুলের আগমন ঘটেছে এমন বিশ্বাস থেকে রাসুলের সম্মানে দাঁড়ানো হয়। যাকে আমাদের পরিভাষায় কেয়াম বলে। এর ফলে রাসুলকে হাজির নাজির মনে করা হয়। এটি একমাত্র আল্লাহর বৈশিষ্ট্য। আল্লাহর এ বৈশিষ্ট্যের সাথে রাসুলকে অংশীদার করে তারা শিরিক করছেন। যা স্পষ্ট হারাম। নাউজুবিল্লাহ।

মিলাদকে বিদয়াত বলা হয় এ জন্য, মিলাদ কেয়ামকে তাদের বেশির ভাগ আলেম ফরজ কিংবা ওয়াজিব মনে করে। দীন ইসলামের কোনো বিধান ফরজ ওয়াজিব মানতে হলে অবশ্যই কোরআন ও হাদিসের অকাট্য প্রমাণ জরুরি। যেহেতু মিলাদের পক্ষে কোনো প্রমাণ কোরআন, হাদিস, সাহাবায়ে কেরামের আমল, তাবিয়ি, তবে তাবিয়ি কারো আমলে নেই তাই এটি বিদয়াত। বিদয়াতকে হাদিসে গোমরাহি বলা হয়েছে।

বরং মিলাদ কেয়ামের বিরদ্ধে উলামায়ে কেরাম কয়েকটি হাদিস পেশ করে থাকেন, যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে তাঁর সম্মানে দাঁড়াতে নিষেধ করেছেন। এরপর সাহাবায়ে কেরাম রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্মানে দাঁড়িয়েছেন এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু আব্বাসি এসব হাদিসকে অস্বীকার করে কোনোটাকে জয়িফ বলে, আবার কোনোটাকে মওকুফ বলে। মওকুফ হাদিসের বিপক্ষে হজরত ফাতেমা রাজি. একটি মারফু হাদিস এনে তিনি মিলাদের প্রমাণ দেন।

চতুর আব্বাসি মিলাদকে ফরজ ওয়াজিব মনে করে না। কেয়ামের বিপক্ষের দলিলগুলো নানা অজুহাতে অস্বীকার করে তিনি মিলাদ কিয়ামকে মুবাহ ও মুস্তাহাব সাব্যস্ত করেন। মিলাদ মুস্তাহাব হওয়ার পেছনে তার যুক্তি হলো উসুলে ফিকহের এই কায়েদাটি

الأصل في الأشياء الإباحة

কোনো বিষয় সম্পর্কে শরিয়তের বিধিনিষেধ না থাকলে সেটা মুবাহ। অর্থাৎ সে কাজ করলে সওয়াব নেই, আবার নিষেধও নয়। তার ভাষ্যমতে, মিলাদ কেয়াম মুবাহ এবং এটা যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালবাসায় হয় তাই মুস্তাহাব।

আব্বসির দাবি মেনে নিলেও আরো অনেক প্রশ্ন থেকে যায়, যার উত্তর আব্বাসি দেননি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজলিসে উপস্থিত হন এজন্য তারা সম্মান করে দাঁড়ান, তাহলে এই সময়ে যারা মদিনায় জিয়ারত করছেন তারা কাকে জিয়ারত করছেন? তারা কাকে সালাম করছে? এত টাকা খরচ করে তাদের মদিনায় যাওয়া বৃথা নয় কি? একই সময়ে অন্য কোথাও তাদের মিলাদ হতে পারে। সেখানে কি রাসুল যায়নি? রাসুল ঠিক কোন সময়ে আসেন? তারা কি দেখতে পান? না হয় আসা মাত্র দাঁড়ান আবার চলে গেলে বসে পড়েন এসব কাজ রাসুলকে না দেখলে কী করে করেন? রাসুলের আগমনকে বিশ্বাস করলে এমন আরো অসংখ্য প্রশ্নের তৈরি হয় যার জবাব আব্বাসি কখনও দিয়েছেন বলে শুনিনি।

যারা মিলাদ কেয়ামকে ফরজ-ওয়াজিব ভাবে উলামায়ে হক্কানি তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ভূমিকা রেখেছেন। আব্বাসি সেটা নিজের উপর নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক জবাব দিয়েছেন অহরহ। আমার পর্যবেক্ষণ, আব্বাসি কখনও তার প্রতিপক্ষের সাথে দায়ির আচরণ করেননি। তার প্রতিপক্ষ হক্কানি আলেম হোক কিংবা অন্য কেউ। চরমভাবে আঘাত করতে বড় দক্ষ সে। তবে উগ্র চরমপন্থী বাম ও তাদের লেবাসধারী দালালদের বিরুদ্ধে তার এ অবস্থান প্রশংসনীয়।

আব্বাসিকে ভালবাসার অনেক কারণ আছে। ঠিক সেভাবে তাকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার রাস্তাও কম নয়। আমরা তাকে ভালবাসব, তবে অসতর্কভাবে নয়। তার কার্যক্রমে সতর্ক দৃষ্টি রেখে ভাল ও যুগান্তকারী কাজের প্রশংসা করা দোষ নয়।

সম্পাদক : কওমি ভিশন