ওবাইদুল্লাহ ওবাইদ
মুসলিমদের কল্যাণে, মুসলিমদের উদ্যোগে, মুসলিমদের দান করা জায়গায় প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গুটিকয়েক ধর্ম বিদ্বেষী দ্বারা ইসলাম ও মুসলিমদের ধর্মীয় অনুভূতিতে বারবার আঘাত করা যেন একটি অঘোষিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। সাংবিধানিকভাবে ধর্ম পালনে সকল নাগরিকের ধর্মীয় স্বাধীনতা থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী বিধান পালন রীতিমত আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিকে একাধিকবার পর্দা ও ইসলামের বিধান পালনে বাধা, ইসলামী বিধানকে কটূক্তি, ধর্ম পালনকারীদের উগ্রবাদী দলের সদস্য অপবাদ দিয়ে ভিকটিম ব্রেমিং এবং পর্দা করলে বাড়ি থেকে পড়াশোনা করতে বলার মত স্পর্ধাও দেখানো হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এছাড়াও নানা সময়ে শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে বিভিন্নভাবে হেনস্থার শিকার হওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। শিক্ষকদের তরফ থেকে ইসলাম পালনে বাধাগ্রস্ত হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ স্বাধীন এই মুসলিম দেশে ইসলাম পালনের লক্ষ্যে ছাত্রীদের কিছুদিন পরপরই দ্বারস্থ হতে হচ্ছে আদালতের। বারবার ছাত্রী ধর্ষণে শিরোনাম হওয়া শিক্ষকদের যখন আদালত পিতার সাথে তুলনা করে পর্দা জরুরি নয় বলে মন্তব্য করে, তখন এ দেশে ইসলাম ও মুসলমানদের কী ভয়াবহ দুর্দশা চলছে তা যেন বলার বাহিরে।
সম্প্রতি শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ৩য় বর্ষের ভাইভা চলাকালে ড. ওয়াহিদুজ্জামানসহ কয়েকজন শিক্ষক একজন ছাত্রীকে হিজাব খুলে ভাইভা দিতে জোর করেন। হিজাব না খোলায় একজন ছাত্রীর ভাইভা নেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে ওয়াহিদুজ্জামান ভুক্তভোগী ছাত্রীকে উগ্রবাদী ট্যাগ দেন এবং পর্দা পালন করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না আসার কথা বলেন। এর পূর্বেও ২০২০-২১ সেশনের একজন শিক্ষার্থীকে নিকাবের জন্য ভাইবা দিতে না দেয়ার অভিযোগ উঠেছিল এই বিভাগের বিরুদ্ধে। পত্রিকা এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ব্যাপারে লেখালেখি করা হলে উল্টো ১৮/৯/২০২২ তারিখে মৌখিক এবং ৬/১২/২০২২ লিখিত নোটিশ দিয়ে মুখ খুলে পরীক্ষা দেয়াকে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার জানান, ঢাবির অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট নিকাবসহ পরীক্ষা নিতে পারলে বাংলা বিভাগ কেন পারবে না?’ ‘ব্রিটিশদের প্রণীত আইনেও পর্দাশীলদের জন্য বিশেষ নিয়ম ছিল। বাংলাদেশের নিয়মেও ধর্মীয় রীতি পালনের অধিকার আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মেও নিকাব খুলে রাখতে হবে এমন কোনো নিয়ম নেই। ব্যক্তি শনাক্তকরণের অনেক নিয়ম আছে। শনাক্ত তো ফিঙ্গারপ্রিন্ট, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতেও করা যায়। ঢাবি প্রশাসন কত অনুষ্ঠানে কতটাকা খরচ করে। আধুনিক এই পদ্ধতিগুলো চালু করলেই পারে।’
মুসলিমদের অগ্রগ্রতির লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস কী বলে?
তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ এর সাথে সাক্ষাৎ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আবেদন জানিয়েছিলেন ঢাকার নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ, ধনবাড়ির নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী, শের-এ-বাংলা হিসেবে পরিচিত রাজনীতবিদ এ কে ফজলুল হকসহ একাধিক মুসলিম নেতৃবৃন্দ। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম বিবিসি বলছে, পূর্ববঙ্গে পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের অগ্রসর পথে এগিয়ে নিয়ে আসা ছিল এই উদ্যোগের একটি অংশ।
বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো বলছে, ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের মাধ্যমে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ব বাংলা ও আসামকে নিয়ে যে আলাদা রাজ্য গঠিত হয়েছিল, তা এ অঞ্চলের মুসলিমপ্রধান জনগোষ্ঠীর দীর্ঘদিনের আশা ও চাওয়া–পাওয়ারই বাস্তব প্রতিফলন। এটা এই অঞ্চলের মুসলমানদের শিক্ষা, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে এবং সর্বোপরি তাদের স্বাবলম্বিতা অর্জনের ক্ষেত্রে বিশেষ সহায়ক ছিল। কিন্তু নানা বিরোধিতার মুখে ইংরেজ সরকার ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ ব্যবস্থাকে বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয়, যা বঙ্গভঙ্গ রদ নামে পরিচিত।
বঙ্গভঙ্গ রদের ঘটনায় পূর্ব বাংলার মুসলিম জনগণ ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ ও আশাহত হন। ঢাকার তৎকালীন নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহর নেতৃত্বে একদল মুসলিম জনপ্রতিনিধি, যার মধ্যে ‘বাংলার বাঘ’ খ্যাত এ কে ফজলুল হক ও সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী অন্যতম, বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে এখানে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানান। তারই প্রেক্ষিতে আজকের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
মুসলমানদের অগ্রগতির জন্য মুসলমানদের অনুদিত জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। আজও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি রাজস্ব পরিশোধ করা হয় নওয়াব সলিমুল্লাহর নামের স্মরণে ‘সলিমাবাদ মৌজা’ নামে।
অথচ সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হিজাব-নিকাবের ওপর বারবার আঘাত করা হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকাব-ইস্যুর রায় যদি মুসলমানদের বিরুদ্ধে যায়, জাতি হিসেবে তা হবে আমাদের জন্য কলঙ্কের। এই পরাজয়ের গ্লানি হয়তো বহুকাল এদেশের মুসলমানদেরকে বয়ে বেড়াতে হবে।
সম্পাদক : কওমি ভিশন
আপনার মতামত লিখুন :