ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের হিংস্র আক্রমণে শাহাদাত বরণকারী বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের চতুর্থ শাহাদাত বার্ষিকী ৭ অক্টোবর। দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে ফেইসবুক স্ট্যাটাস দেওয়ায় ২০১৯ সালের এই দিনে (৭ অক্টোবর) আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা। বুয়েটের শেরেবাংলা হলের আবাসিক ছাত্র ও তড়িৎ কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
একজন নিরীহ মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ ফেনী নদীর পানি ইন্ডিয়াকে ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া নিয়ে ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের ৫৪ নদীর পানি ওজানে বাঁধ দিয়ে আটকে দিয়েছে ইন্ডিয়া। অথচ ফেনী নদীর পানি ইন্ডিয়াকে ব্যবহারের জন্য অনুমতি দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এ নিয়ে ছোট স্ট্যাটাসে প্রশ্ন তুলেছিলেন আবরার ফাহাদ। এতেই ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাঁকে রুম থেকে ডেকে নিয়ে রাতভর পিটিয়ে হত্যা করেছিল।
পৈশাচিক এ হত্যাকাণ্ডের পর বুয়েটের সাধারণ ছাত্ররা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। প্রতিবাদের মুখে সংগঠনের শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগে সাধারণ সম্পাদক রাসেলসহ বুয়েট শাখার ১২ নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ। ১১ অক্টোবর বুয়েট প্রশাসন ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করে। এরপর ওই বছরের ২১ নভেম্বর হত্যা মামলায় সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে ২৫ চিহ্নিত সন্ত্রাসীকে বুয়েট থেকে বহিষ্কার করা হয়। তাদের সবাই বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী নেতা-কর্মী।
আবরার ফাহাদকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় জেলা জজ আদালতে রায় হয়েছে। কিন্তু মামলাটি হাইকোর্টে এখনো বিচারের অপেক্ষায়। হাইকোর্টে ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করছেন। কারণ, প্রকাশ্য দিবালোকে বিশ্বজিৎ নামে এক দরজি দোকানীকে শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করেছিল ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা। এই মামলায় জেল জজ আদালতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দণ্ড দিলেও খালাস করে দিয়েছে হাইকোর্ট। সুতরাং আবরার ফাহাদ হত্যা মামলাটির ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়েও শঙ্কিত আবরারের সহপাঠীরা।
আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় ২০২১ সালের ৮ই ডিসেম্বর ঢাকার বিচারিক আদালতে রায় হয়। এতে ২০ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। তবে এতদিনেও মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের শেষ আইনি ধাপ ডেথ রেফারেন্স শুনানিই শুরু করা যায়নি। ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর আবরার হত্যা মামলায় ২০ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং ৫ আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক আবু জাফর মো. কামরুজ্জামান।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— মেহেদী হাসান রাসেল (২৪), মো. অনিক সরকার ওরফে অপু (২২), মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত (২৩), ইফতি মোশাররফ সকাল (২০), মো. মনিরুজ্জামান মনির (২১), মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন (২৩), মো. মাজেদুর রহমান ওরফে মাজেদ (২০), মো. মুজাহিদুর রহমান ওরফে মুজাহিদ (২১), খন্দকার তাবাকারুল ইসলাম ওরফে তানভির (২১), হোসেন মোহাম্মদ তোহা (২১), মো. শামীম বিল্লাহ (২১), মো. সাদাত ওরফে এ এস এম নাজমুস সাদাত (২১), মুনতাসির আল জেমী (২০), মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান (২২), এস এম মাহমুদ সেতু (২৪), সামসুল আরেফিন রাফাত (২১), মো. মোর্শেদ ওরফে মোর্শেদ অমত্য ইসলাম (২০), এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম (২০), মোহাম্মদ মোর্শেদ উজ্জামান মণ্ডল প্রকাশ জিসান (২২) এবং মুজতবা রাফিদ (২১)। এর মধ্যে তানিম, প্রকাশ জিসান ও রাফিদ পলাতক রয়েছেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন— অমিত সাহা (২১), ইসতিয়াক আহমেদ মুন্না (২১), মো. আকাশ হোসেন (২১), মুহতাসিম ফুয়াদ (২৩), ও মো. মোয়াজ ওরফে মোয়াজ আবু হুরায়রা (২১)।
গত বছরের (২০২২) ৬ই জানুয়ারি বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার যাবতীয় কাগজপত্র মূল নথিসহ ৬৬২৭ পৃষ্ঠার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়।
এরপর গত ১২ই জানুয়ারি দায়ের করা মামলার রায়ের কপি কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।
মামলা-সংশ্লিষ্টরা জানান, ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেছেন আসামিরা। রাষ্ট্রপক্ষও বিধি অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) আবেদন করেছে। তবে শুনানি এখনও হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, মামলার পেপার-বুক (এজাহার, রায়সহ যাবতীয় বৃত্তান্ত) তৈরি হলেই শুনানি শুরু করা যায়। তবে তা এখনও তৈরি হয়নি।
আপনার মতামত লিখুন :