আশরাফ মাহদী: গতসপ্তাহে এক মাহফিলে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী সাহেব উনার এক বয়ানে ৫ই মে শাপলা চত্বর তৈরীর প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা করেন। বক্তব্যকালে তিনি শাপলার ইতিহাস বিকৃতিকারীদের প্রতি কড়া হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন,
“দালালদেরকে আপনারা চিহ্নিত করবেন, যে দালালেরা একটি আসনের জন্য গোটা ইতিহাসকে নষ্ট করছে। আমাদের শক্ত থাকতে হবে।
আমি কারো সমালোচনা করবো না। আমার কথা অযৌক্তিক হলে আপনারা ধরিয়ে দিবেন।
আমাদের সম্মানটা কোথায় গেল? কওমী মাদরাসার সম্মান নষ্ট করে দিয়েছে এসব দালাল মৌলভীরা৷
শাপলা চত্বর আমরা কেন গেলাম? সচিবালয় দখল করার জন্য নয়, রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার জন্য নয়। শাপলা চত্বরে গিয়েছিলাম রাসুলুল্লাহ সা. এর ইজ্জত রক্ষার্থে। কত শহিদ হয়েছিল সেই শাপলা চত্বরে! শাপলা চত্বরে আমার সামনেই আটটি লাশ রাখা ছিল৷ আমি সেই লাশগুলো দেখেছি। চোখের অশ্রু রাখতে পারিনাই, পারিনাই আমি।
সেই রাতে আমার কাছে টেলিফোন আসতেছে আপনি সরে যান, চলে যান। আমি বললাম লক্ষ লক্ষ মানুষ আমার দিকে তাকায় আছে, আমি সরতে পারবোনা। ওদের যে অবস্থা, আমারও সেই অবস্থা, প্রয়োজনে এই শাপলার চত্বরে শহিদ হবো, তারপরও সরবো না।
এই কওমী ওলামাদের ইজ্জত রক্ষা করার জন্য শাপলা চত্বরে গিয়েছিলাম, কি হয়ে গেল? ১৩ দফা দাবী নিয়ে শাপলা চত্বরে গিয়েছিলাম। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দাবী দাওয়া পেশ করা কোন অপরাধ নয়। আমাদের হাতে অস্ত্র বা হাতিয়ার ছিল না। আমরা দাবী দাওয়া পেশ করার জন্য গিয়েছিলাম। রিকশাওয়ালা যদি দাবী দাওয়া পেশ করতে পারে, কওমী ওলামায়ে কেরাম দাবী দাওয়া পেশ করতে পারে না? কারণ এই নাস্তিক ব্লগাররা আমাদের নবীকে গালি দিয়েছে। ব্লগার রাজিব তার নিজের ব্লগে লিখেছে নবী মুহাম্মদ নারী মদ নিয়ে থাকত।আর নারী মদ নিয়ে পড়ে থাকলে ঘরে কুকুর ঘেউ ঘেউ করে। সে জন্য সে ফতোয়া জারী করেছে যে কুকুর থাকলে ফেরেশতা ঢুকেনা৷ নাউজুবিল্লাহ।
দুঃখজনকভাবে বলতে হয় নব্বইভাগ দেশের প্রধানমন্ত্রী এই রাজিব যখন মারা গেছে এই রাজিবকে দেখতে গেছে, সম্মান দিয়েছে, শহিদ ঘোষণা করেছে। এই রাজিব কি শহিদ হতে পারে?
এসব কিছু নিয়ে আমরা গিয়েছিলাম শাপলা চত্বরে। হেফাজতে ইসলামের তেরো দফা দাবীর দ্বিতীয় দফা হল,
‘যারা মহানবীর শানে বেয়াদবী করে, নবীকে নিয়ে কটুক্তি করে তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে বিলপাশ করতে হবে’।
এই আমাদের দাবী। গনতান্ত্রিক রাষ্ট্রে দাবী দাওয়া পেশ করা কোন অপরাধ নয়। ইয়া আল্লাহ! শাপলা চত্বরে গিয়ে দেখলাম এদেশ গনতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়, এদেশ অস্ত্রতান্ত্রিক রাষ্ট্র। রাত দুইটা বাজে শুরু হয়েছে অভিযান৷ আমার মাথার উপর দিয়ে কয়েকশ গুলি গেছে। দেড় লক্ষ রাউন্ড গুলি তারা সেখানে খরচ করেছে। আমাদের কাছে সব তথ্য আছে৷ শতশত মানুষ শহিদ হয়েছে। হাজার হাজার ওলামায়ে কেরাম আহত হয়েছে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে বলতে হয় সেদিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরানা মাহফিলে সরকারী একজন দায়িত্বশীল বলেছেন,
“শাপলা চত্বরে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনাই। একজন মানুষও আহত হয়নাই”৷
যারা এইসব কথা বলে তারা মিথ্যাবাদী। আমি তার প্রতিবাদ করেছি। শোকরানা মাহফিলে তো এসব আলোচনার কোন দরকার নেই।
বাতিলের শক্তি অনেক বেড়ে গেছে। ওলামায়ে কেরামে মরতবা যেমন অনেক বড়, তাদের দায়িত্বও বড়। তাদের বড় একটি দায়িত্ব হল মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহর নায়েব হিসেবে, ইবরাহিম খলিলুল্লাহর নায়েব হিসেবে, মুসা করিমুল্লাহর নায়েব হিসেবে, যে কোন বাতিলের দাতভাঙ্গা নয়, মাড়িভাঙ্গা জবাব দিতে হবে।
খবরদার ভাই, কোন বেচাকেনা যেন না হয়। লা ইউশতারা ওয়ালা ইউবাউ। বাতিল গোষ্ঠী চাইতেছে ওলামাদের বেচাকেনা করতে। কওমী মাদরাসাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতেছে। কওমী দেওবন্দী মাদরাসা যেই তরিকায় চলে আসতেছে আল্লাহর কসম, সেই তরিকায় চলবে। যদি কওমী মাদরাসাকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়, ধ্বংস করা হয় তাহলে এদেশের জনগণ জীবন দিয়ে হলেও কওমী মাদরাসার ঐতিহ্য স্বকীয়তা রক্ষা করবেই করবে, ইনশাআল্লাহ।