মাওলানা কাসিম নানুতবী রহ. ও স্যার সৈয়দ আহমাদ সাহেব ছিলেন সহপাঠী। একই উসতাদ তথা মামলুক আলী রহ. -এর ছাত্র। মাওলানা কাসিম নানুতবী রহ. প্রতিষ্ঠা করেন দারুল উলুম দেওবন্দ। আর স্যার সৈয়দ আহমাদ সাহেব প্রতিষ্ঠা করেন আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়। ইতিহাস বলে একই শিষ্যের দুই ছাত্রের দুই প্রতিষ্ঠানের গতিপথ ও আদর্শ ছিল পুরোপুরি ভিন্ন।
দেওবন্দ এমন একটি ইসলামী ইউনিভার্সিটিতে পরিণত হয় যেখান থেকে বের হয় আলেম, মুহাদ্দিস, মুফাসসির, ফকিহ, মুফতি, মুফাক্কির, মুজতাহিদ। তাঁরা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে দীনের বহুমুখী খিদমত আনজাম দেন।
দারুল উলুম দেওবন্দ আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. -এর মত মুহাদ্দিস, ইলিয়াস রহ. -এর মত মুবাল্লিগ, থানভী রহ. -এর মত হাকিমুল উম্মত, মুফতি কেফায়েতুল্লাহ রহ. -এর মত মুফতিয়ে আজম তৈরি করে বিশ্বাবাসীকে দেখিয়েছে হিদায়েতের উজ্জ্বল রশ্মি। লক্ষ লক্ষ উলামায়ে কেরাম দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে শিক্ষা-দীক্ষা লাভ করে সারা বিশ্বে সর্বস্তরের জনতার মাঝে ইসলামের তাহজিব ও তামাদ্দুন পৌঁছে দিয়েছেন।
কিন্তু সেই আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় কী করল? ডজনে ডজনে ইংরেজ সরকারের দালাল তৈরি করল। যারা আলীগড় থেকে পড়াশোনা শেষ করে বের হত তারা থাকত একজন আরেকজনের চেয়ে অগ্রগামী ইংরেজ সরকারকে কুর্ণিশকারী চাটুকার। তারা ‘শামসুল উলামা’ উপাধীতে ভূষিত হয়ে ইংরেজদের নিরাপত্তা বিধান করেছে।
তৎকালে উম্মাহর দরদি সাহসী বহু আলেম ছিলেন। উম্মাহকে রক্ষার সব ব্যবস্থা তারা গ্রহণ করে পিছ পা হতেন না।
শাইখুল হিন্দ রহ. সেই দরদি আলেমদের অন্যতম। আজকের ইতিহাস তাঁকে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। তাঁর সাহসী ভূমিকা না থাকলে সেদিন ঘরে ঘরে ইংরেজদের দালাল তৈরি হত। প্রজন্ম জানতেই পারত না ইংরেজদের দালালি করা দেশ ও দেশের মাটির সাথে কতটা বেইমানি।
শাইখুল হিন্দ রহ. আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘ইউনিভার্সিটির মুসলিম নওজোয়ান ভাইয়েরা আমার! তোমরা কোন দিকে চলে যাচ্ছো? তোমরা তো ইংরেজদের সহযোগী বনে যাচ্ছো দিন দিন। আমি তোমাদের সম্মুখে উপস্থি হয়েছি।
এসো! মুহাম্মদ ইবনে কাসিমের জজবা স্পৃহা ও ইমানী চেতনায় বলিয়ান হই। এসো ইংরেজদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলি।
হজরত শাইখুল হিন্দের বক্তব্য শুনে আলীগড় থেকে তৈরি হন ইতিহাস বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, মাওলানা মুহাম্মদ আলী জওহর, শওকত আলী, হাসরত মুহানী, শিবলীর মত প্রমুখ বড় বড় নেতৃবৃন্দ।
আজকের এই সময়ে দ্বিতীয়বার আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন পড়ে না। দেওবন্দের আদর্শ লালনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোই দিন দিন আলীগড়ের মত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হচ্ছে। সেই প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষায় একজন শাইখুল হিন্দের বড়ই অভাব অনুভব করছি।
সম্পাদক : কওমি ভিশন