হিজরি ৬১তম বর্ষের (৬৮০ খ্রিস্টাব্দ) ১০-ই মুহররম নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র হুসাইন (রা.)-কে ফোরাত নদীর তীরে কারবালা প্রান্তরে নির্মমভাবে শহীদ করা হয়। শিয়া মতাবলম্বীরা দিনটিতে তাজিয়া মিছিল বের করে এবং নিজেদের শরীরে ছুরিকাঘাত করে কষ্ট অনুভব করে। তাদের বিশ্বাস– শহীদ হওয়ার সময় তিনি যে কষ্ট পেয়েছিলেন, তারাও নিজেদের পিঠে ছুরিকাঘাতে সে কষ্ট অনুভবের চেষ্টা করে।
আশুরা বা দশম দিনে হুসাইন (রা.)-এর সমাধির প্রতিকৃতি নিয়ে মিছিল বের করা হয়। মিছিলে যুবকদের হাতে থাকে ছুরি ও ধারালো অস্ত্র। অন্যদের হাতে দেখা যায় জরি লাগানো লাল আর সবুজ নিশান, মাথায় শোকের কালো কাপড়। কালো চাঁদোয়ার নিচে কয়েকজন বহন করে হুসাইন (রা.)-এর প্রতীকী কফিন। মিছিলের সামনে থাকে হাসান (রা.) ও হুসাইন (রা.) এর জন্য দুটি প্রতীকী ঘোড়া। দ্বিতীয় ঘোড়ার জিনটিকে রক্তের লালে রাঙানো হয়।
এভাবে তাজিয়া মিছিলকে শিয়া সম্প্রদায় একটি ধর্মীয় বিষয় হিসেবে উদযাপন করে এবং সেটিকে তাঁরা ইবাদত মনে করে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে পালন করে। এদিন অনেক সুন্নি মুসলিমও দর্শক হিসেবে তাজিয়া মিছিলে যোগ দেয়। কিন্তু তাঁরা জানে না বা জানার চেষ্টা করে না– তাজিয়া মিছিল কি ইসলাম সমর্থিত? তাজিয়া মিছিলে যোগদান বৈধ কিনা? ইত্যাদি নানা প্রশ্নের উত্তর।
তাজিয়া মিছিলের মূল কাজগুলো যথা—
১. হুসাইন (রা.)-এর সমাধির প্রতিকৃতি বহন করা।
২. লাঠি ঘোরানো ও তরবারি চালনা।
৩. মিছিলে মাতম করা, বুক চাপড়ানো ও ছুরি বা জিঞ্জির দিয়ে আঘাত করে পিঠকে রক্তাক্ত করা ।
৪. বাদ্যযন্ত্রের সাথে শোকগান গাওয়া।
যার সবকিছু অর্থহীন আনুষ্ঠানিকতাই শুধু নয়, ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নিষিদ্ধ ও গর্হিত কাজও বটে। হুসাইন (রা.)- এর মর্মান্তিক শাহাদাত বরণে একজন মুসলিম স্বাভাবিক ভাবেই শোকাহত হবে। কিন্তু একে কেন্দ্র করে শোক পালন করা, মাতম করা আল্লাহ তাআলা অবাধ্যতা ও নবীজির মহান শিক্ষার খেলাফ।
আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন,
”সুতরাং এর মধ্যে তোমরা নিজেদের প্রতি অত্যাচার করো না।” (সূরা তওবা: ৩৬)
নিজের উপর জুলুম করাকে আল্লাহ তাআলা নিষিদ্ধ করেছেন। কারণ, আমাদের প্রাণের মূল মালিকানা আমাদের নয়; আল্লাহ তাআলার।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
“সে ব্যক্তি আমাদের দলের লোক নয়, যে [মৃতের শোকে] নিজ মুখমন্ডলে হাত দ্বারা আঘাত করে, জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলে এবং অন্ধকার যুগের লোকদের মত হা-হুতাশ করে।
(সহীহ বুখারী: ১২৯৭ ও ১২৩৫, সহীহ মুসলিম: ১৬৫ ও ১০৩)
এরকম আরো অনেক হাদীস রয়েছে যা স্পষ্ট ভাষায় প্রমাণ করে যে, উচ্চস্বরে বিলাপ করা, শোকে কাতর হয়ে নিজের জামা কাপড় ছিঁড়ে ফেলা ইত্যাদি নিষিদ্ধ। এসব করতে নবীজি স্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন।
“রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।” (সূরা হাশর: ৭)
নবীজির নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাতম করা, শোকের আতিশয্যে নিজেকে আঘাত করা ইবাদত নয়। বরং সুস্পষ্ট পথভ্রষ্টতা ও নাফরমানি।
উপরন্তু এসবের সাথে যখন নানা ধরনের অন্যায় ও গর্হিত কাজ যুক্ত হয় যেমন: নাচ, গান, বেপর্দা চলাফেরা এবং নানা শিরকী ও বিদআতী কাজকর্ম— তখন তা আরো বেশী নিন্দনীয় ও বর্জনীয় হয়ে পড়ে।
তাজিয়া মিছিলের মাধ্যমে শিয়া সম্প্রদায় হিন্দুদের প্রতিমা বিসর্জনের মতো একটি প্রতিকী শোক প্রকাশ করে থাকে মাত্র। যা কিছুতেই ধর্মীয় কাজ নয়। ইবাদত তো নয়ই। এটা কোন নৈতিক কাজও নয়। বরং আল্লাহ তাআলার নাফরমানি, গুনাহ। তাই এজাতীয় নিষিদ্ধ কাজ দেখতে যাওয়া ও অংশগ্রহণ করা থেকে দূরে থাকতে হবে।