চট্টগ্রামের বিখ্যাত ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নাজিরহাট আল জামিয়াতুল আরবিয়া নছিরুল ইসলাম বড় মাদ্রাসায় আজ ছাত্র শিক্ষকের নামে করা মাওলানা সলিমুল্লাহর সংবাদ সম্মেলনের সময় হঠাৎ ছাত্ররা শূরা বৈঠকের দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকে। এরপর দুপক্ষের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে সংঘর্ষ তৈরি হয়। এতে কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয় বলে জানা গেছে। মাদ্রাসার বহিরাগত কিছু লোক পরিকল্পিতভাবে পূর্ব থেকে মাদ্রাসায় অবস্থান করে ছাত্রদের আঘাত করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ছবিতে বহিরাগতদের স্পষ্ট দেখা যায়।
নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার মরহুম মুহতামিম মাওলানা ইদরিস সাহেব ইনতিকালের পর তার আসনটি শূন্য হলে মুহতামিমের যাবতীয় দায়িত্ব আদায় করতে, জানাজার নামাজের পর উক্ত মাদ্রাসার শূরা সদস্য জামিয়া বাবুনগর মাদ্রাসার মুহতামিম আল্লামা মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী মজলিসে শূরার পক্ষ থেকে নাজিরহাট মাদ্রাসার নির্বাহী পরিচালক মাওলানা মুফতি হাবিবুর রহমান কাসেমিকে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম ঘোষণা করেন। মুফতি হাবিবুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত মুহতামিম নিযুক্ত করাটা এক পক্ষের পছন্দ না হলেও বিতর্ক তখনও প্রায় অদৃশ্য।
কিছুদিন পর মাওলানা আনাস মাদানি তার পিতা মরহুম আল্লামা আহমদ শফীর নাম ব্যবহার করে একক সিদ্ধান্তে নাজিরহাট মাদ্রাসার মুহাদ্দিস ও শিক্ষাসচিব মাওলানা সলিমুল্লাহকে মুহাতমিম ঘোষণা করে। মাওলানা সলিমকে মুহতামিম মেনে নিতে আল্লামা আহমদ শফী স্বাক্ষরিত প্যাডে বিশেষ বার্তা এবং ভিডিও বার্তা দেয়ার পরও তাকে মুহতামিম মানতে নারাজ মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক, এলাকাবাসাীসহ বৃহত্তর একটি অংশ। আল্লামা আহমদ শফীর একক সিদ্ধান্তে মুহতামিম নিয়োগের অভিযোগ আনেন তারা।
এদিকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় শূরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা মাওলানা সলিম পক্ষ দাবি করলেও ঘটনার দিন কওমি ভিশনের অনুসন্ধানে শূরা বৈঠকের কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। শূরা বৈঠকের তথ্য জানতে কয়েকজন শূরা সদস্যকে ফোন করা হলে তারাও শূরার কথা অস্বীকার করেন।
ক্রমান্বয়ে এ বিতর্ক চরম আকার ধারণ করতে থাকে। আল্লামা আহমদ শফীর ইনতিকালের পর তাকে ব্যবহার করে আসা মাওলানা সলিমুল্লাহর পক্ষ দুর্বল হয়ে পড়ে। মাদ্রাসার শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে দিতে সরকারের সম্মাতিক্রমে প্রশাসন শূরা বৈঠকের উদ্যোগ গ্রহণ করে। অভিযোগ রয়েছে, শূরার বৈঠক বানচাল করতে ছাত্র শিক্ষকের নামে সংবাদ সম্মেলনের ডাক দেন মাওলানা সলিম উল্লাহ। উক্ত সাংবাদিক সম্মেলন থেকে উত্তেজনার সূত্রপাত।
বহিরাগত কিছু লোক মাদ্রাসার ফতোয়া বিভাগের ছাত্রদের উপর আক্রমণ করলে উত্তেজনা চরমে পৌঁছে। শূরা বৈঠকের দাবিতে ছাত্ররা শ্লোগান দিতে থাকে। মসজিদের মাইক দখল করে আন্দোলনকারী ছাত্ররা তাদের দাবি দাওয়া ঘোষণা করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় এমপি নজিবুলি বশর মাইজভাণ্ডারির নেতৃত্বে, ওসি, ইউএনওসহ অসংখ্য পুলিশ ও র্যাব সদস্য মাদ্রাসায় উপস্থিত হন। শূরা কমিটির সম্মতি অনুযায়ী যে কোনো সময় শূরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হলে তাতে নিরাপত্তা দেয়ার আশ্বাস দেন সাংসদ।
নাজিরহাট বড় মাদ্রাসার বর্তমান পরিস্থিত স্বাভাবিক রয়েছে। ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী মুহাদ্দিস মাওলানা সলিম উল্লাহসহ তার সমর্থিত শিক্ষকগণ মাদ্রাসা ত্যাগ করেন। শূরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৮ তারিখ। ২৬ শূরা বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যস্ততার কারণে পূর্ব নির্ধারিত তারিখে শূরা অনুষ্ঠিত হবে। শূরা বৈঠকের আগ পর্যন্ত জামিয়ার সকল শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।