রাষ্ট্রচিন্তা’র সংগঠক দিদারুল ভূঁইয়া, কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মোশতাক ও সাংবাদিক কাজলের মুক্তির দাবিতে রবিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে চরমোনাই পীরের জনপ্রিয় রাজনৈতিক সংগঠন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন অংশ নেয়ায় বাম রাজনীতির সংগঠন ‘বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী’র নেতারা এটিকে ‘বিব্রতকর’ বলায় বিব্রত প্রকাশ করেছে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন।
এ বিষয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মাহমুদুল হাসান নিজ ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন (নিচে তা হুবুহু তুলে ধরা হলো)–
“বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী আজকের মানববন্ধনে আমাদের উপস্থিতিতে একাত্মতা প্রকাশে বিব্রত হওয়ায়, তাদের ফ্যাসিবাদী আচরণে আমরা বিব্রত। আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের সরকার দীর্ঘ ১২ বছর একচেটিয়া বিরোধী দলহীন স্বৈরাচারী শাসন পরিচালনা করে আসছে। এই দীর্ঘ সময়ে সরকার তার বিরোধী মত দমনে হত্যা, গুম, ধর্ষণ, সাদা পোশাকে তুলে নেয়া এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাসহ নানা অপকর্ম করে আসছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার ক্ষেত্রে সরকার সিদ্ধহস্ত। গণমাধ্যম, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের কফিনের শেষ পেরেকটি হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক দিদারুল ভূঁইয়া, কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মোশতাক ও সাংবাদিক কাজলের বিনা অপরাধে তুলে নিয়ে যাওয়া এবং মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করা এই দীর্ঘ নির্যাতনেরই ধারাবাহিকতা। আজকে এই নির্যাতনের প্রতিবাদে সারাদেশ ব্যাপি রাষ্ট্রচিন্তা মানববন্ধনের কর্মসূচি দেয়। আমাদের আমন্ত্রণ জানালে অন্যান্য সংগঠনের মতোই ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে সংহতি প্রকাশ করে। কিন্তু আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করি বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী নামের একটি সংগঠনের সভাপতির পক্ষ থেকে বিবৃতিতে বলা হয় ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দের উপস্থিতির কারণে তারা মানববন্ধনে একাত্ম প্রকাশে বিব্রত। তাদের এধরণের রাজনৈতিক হীনমন্যতা আমাদের কাছে নতুন কিছু নয়। ডাকসু নির্বাচন সহ ইতোপূর্বে প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের ছাত্র সমাজকে নিয়ে বিব্রত হয়েছে বারবার।আমরা মনে করি একটি ছাত্র সংগঠনের এমন বিবৃতি তাদের আদর্শিক দৈন্যতা ও রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতার বহিঃপ্রকাশ। তাদের এধরণের কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের রাজনীতিতে বর্ণবাদী রাজনীতিকে প্রসার ঘটাচ্ছে। দেশের ফ্যাসিবাদী সরকারকে নয় বরং ইসলামী আদর্শের একটি সংগঠনকে প্রতিহত করতে তারা বেশি উদগ্রীব। যা তাদের রাজনৈতিক দুরভিসন্ধিতা ছাড়া আর কিছু নয়। আমরা এমন নীচ রাজনীতিকে নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা জাতির কাছে পরিষ্কার করতে চাই যে আমার কোনো মতাদর্শিক পার্থক্যকে নয় বরং দেশ ও দেশের মানুষের অধিকারকে সবার আগে প্রাধান্য দিয়ে থাকি। এমন কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলায় যে বা যারাই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে প্রাধান্য দিবে, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলবে এবং মনে প্রাণে চাইবে বাংলাদেশের বর্তমান ফ্যাসিবাদের অবসান ঘটিয়ে সামনে যেন সাংবিধানিকভাবে ফ্যাসিবাদী রাজনীতির উত্থান না ঘটুক, আমরা তাদের সাথে আছি। আমরা তাদের সাথে যেকোনো আন্দোলনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আমরা আরো পরিষ্কার করতে চাই, এমন হীন ও নীচ মানসিকতাই আমাদের রাজনৈতিকভাবে জাতীয় সংহতি গড়ে তোলার পথে প্রথম বাঁধা। তাই যারাই এই রাজনৈতিক সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত হয়ে গণ-আন্দোলনে শরীক হতে পারবে জনগন তাদের স্বাগত জানাবে। আর যারা পারবে না তারা বরাবরের মতোই নিক্ষিপ্ত হবে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রচিন্তার প্রধান সংগঠক হাসনাত কাইয়ুম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বামপন্থি সংগঠনকে আমরা সব সময় বন্ধুই মনে করি। তবে যুদ্ধাপরাধী ও পাচারকারী ছাড়া কোনো সংগঠনের সাথে আমাদের শত্রুতা নেই। কোনো সংগঠনের সাথে আমাদের কোনো ধরনের বিদ্বেষ বা পক্ষপাতিত্বও নেই।
“মানববন্ধনে যারা যারা দাঁড়িয়ে পড়েন, তাদের কাউকে তো আমরা না করতে পারি না। কাউকে আমরা বিব্রত করতে চাই না।”
রাষ্ট্রচিন্তার মানববন্ধনে রাষ্ট্রচিন্তার সংগঠক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, রাখাল রাহা, ফরিদুল হক ইশরাত শিল্পী, ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মাহমুদ, মৌলিক বাংলার শশ্মান ঠাকুর, সাংবাদিক বাধন অধিকারী, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী’র সভাপতি ইকবাল কবীর, ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর, মরিয়ম প্রমুখ।