বাংলাদেশের বিভিন্ন স্পটে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি নির্মাণের প্রতিবাদ করায় চরমোনাই পীর মুফতি রেজাউল করিম এবং বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশেল যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে চরমপন্থী সংগঠন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এসময় তারা এ দুজন বরেণ্য আলেমের কুশ পুত্তলিকা দাহ করে।
শনিবার বিকালে রাজু ভাস্কর্য়ের পাদদেশে আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা করা অভিযোগে মাওলানা মামুনুল হক ও মুফতি রেজাউল করিমকে গ্রেপ্তারসহ সাত দফা দাবি জানানো হয়। এ সময় তাদের কুশপুতুল দাহ করা হয়।
‘টিএসসির সকল সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন’র ব্যানারে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ ছাড়াও সরকার সমর্থক নেতাকর্মীরা এতে অংশ নেন।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী যুবলীগের প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিছক ভাস্কর্য নয়, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গোটা বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ৫৬ হাজার বর্গমাইলের প্রতিচ্ছবি, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য আমাদের লাল-সবুজের প্রতিচ্ছবি।
জয়দেব আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের বিরোধিতা করে তারা আমাদের অস্তিত্বে আঘাত করেছে। গর্তের ভেতর থেকে তারা আস্ফালন করছে। আমরা বসে থাকেতে পারি না। এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রতিটি যৌক্তিক আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। আসুন অমরা এই মৌলবাদী অপশক্তিকে রুখে দাঁড়াই।
ডাকসুর সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। ভাস্কর্য আর মূর্তি এক জিনিস নয়। ভাস্কর্য ও মূর্তির পার্থক্য বুঝতে হবে। এই পার্থক্য কাঠামোগত নয়, এটা চেতনাগত। চেতনার মাধ্যমে মূর্তির আরাধনা করা হয়। অন্যদিকে একটি ভাস্কর্য জাতির ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতীক।
মুজিববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আমরা ডাকসুর পক্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের দাবি জানিয়েছিলাম। উপাচার্য আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন, মুজিববর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করবেন। সেটি দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য আমরা আজকের মানববন্ধন থেকে জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিবাদ সমাবেশ ও কুশ পুত্তলিকা দাহ শেষে রাজু ভাস্কর্য থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগে সড়ক আটকে বিক্ষোভ করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। প্রায় ঘণ্টাখানেক সেখানে তারা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
তাদের সাত দফা দাবির মধ্যে রয়েছে–
শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি নির্মাণের প্রতিবাদ করার অপরাধে তাদের ভাষায়, ‘ধর্ম ব্যবসায়ী’ মামুনুল হক ও ফয়জুল করীমকে গ্রেপ্তার করতে হবে।
দেশের প্রতিটি বিশ্বিবদ্যালয়, কলেজ ও জেলা, উপজেলায় শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তি নির্মাণ করতে হবে।
বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে।
বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় বক্তাদের উস্কানি চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে হবে এবং মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ওপর যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়াতে হবে।
মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে হবে।
Like this:
Like Loading...
Leave a comment