عَنْ أَبِي أَيُّوبَ الْأَنْصَارِيِّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، أَنَّهُ حَدَّثَهُ ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ . رواه مسلم
অর্থ: আবু আইয়ুব আনসারী (রাজি.) বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি রমাদানের সিয়াম পালন করবে, তারপর শাওয়াল মাসে ছয়টি সিয়াম পালন করবে তার জন্য সারা বছর সিয়াম পালনের মত (ছাওয়াব) হবে। -মুসলিম।
তাখরীজুল হাদীস
এই হাদীসটি ইমাম মুসলিম ‘সহীহ’ গ্রন্থে (২০৭০), ইমাম আহমদ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (২৩০৩০), ইমাম তিরমিযী ‘আল জামে’ গ্রন্থে (৭৪৬), ইমাম বায়হাকী ‘সুনান কুবরা’ গ্রন্থে (৭৯২৭), ইমাম তাবরানী ‘মু’জামুল কাবীর’ গ্রন্থে (৩৮১৩), ইমাম তাহাবী ‘মুশকিলুল আছার’ গ্রন্থে (১৯৪৩), ইমাম আবু আওয়ানা ‘মুস্তাখরাজ’ গ্রন্থে (২১৭৮) এবং আরো অনেক মুহাদ্দিস তাদের স্ব স্ব গ্রন্থে হযরত আবু আইয়ুব আনসারী (রজিঃ) থেকে হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।
রাবী পরিচিতি
এই হাদীসের রাবী তথা বর্ণনাকারী হলেন, হযরত আবু আইয়ূব আনসারী (রাজি.)। তিনি ছিলেন একজন মদীনাবাসী প্রসিদ্ধ সাহাবী। হিজরাতের পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর ঘরে মেহমান হয়েছিলেন। একারণেই তাঁকে ‘মুযীফু রাসূলিল্লাহ’ উপাদিতে ভুষিত করা হয়। তাঁর উপনাম হল, আবু আইয়ুব। নাম হল, খালিদ ইবনু যায়েদ ইবনু কুলাইব ইবনে ছা’লাবা ইবনু আব্দে আউফ আল আনছারী আল খাযরাজী। তিনি ‘আকাবা’ এবং বদর সহ সব যুদ্ধে শরীক ছিলেন। তিনি পঞ্চাশের বেশী হাদীস বর্ণনা করেছেন। অনেক সাহাবী তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুআবিয়া ইবনে আবুসুফিয়ান (রাজি.) এর খেলাফতকালে ইয়াযিদ এর নেতৃত্বে সংগঠিত যুদ্ধে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। কুসতুনতুনিয়াতে তাঁর কবর রয়েছে।
হাদীসের ব্যাখ্যা
এই হাদীস থেকে বুঝে আসে, রমাদানের পূর্ণ একটি মাস সিয়ামপালনের পর শাওয়াল মাসে ছয়টি সিয়াম পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফযীলতপূর্ণ কাজ। এমনকি সারা এক বছরের পূণ্য পাওয়া যাবে। এর ব্যাখ্যা হলো, পূণ্যের নিয়ম মতে একটি পূণ্যের বদলে দশটি করে নেকী পাওয়া যায়। এই হিসেবে রমাদানের একটি মাস সিয়াম পালন করলে দশ মাস সিয়াম পালন করার সমান পূণ্য পাওয়া যায়। আর ছয় দিন সিয়াম পালনের দ্বারা ষাট দিন তথা দুই মাস সিয়াম পালনের সমান পূণ্য পাওয়া যায়। অতএব রমাদানের দ্বারা দশ মাস এবং ছয় দিন দ্বারা দুই মাস সর্বমোট ১২ মাস তথা এক বছর সমান পূণ্য পাওয়া যাবে। আর আল্লাহ তাআলা চাইলে আরো অনেক গুনে বৃদ্ধি করে দিবেন যা কোন বান্দা কল্পনা করতে পারবে না।
এই সিয়াম পালনের নিয়ম হলো, পুরো শাওয়াল মাসের যে কোন সময়ে ছয়টি সিয়াম পালন করা। তবে ঈদের দিন সিয়াম পালন করা যাবে না। কারণ ঈদের দিন সিয়াম পালন নিষেধ। তাই এই দিন সিয়াম পালন করলে তাতে পূন্য তো হবেই না বরং তাতে গুনাহ ও পাপ হবে।
এই ছয়টি সিয়াম ইচ্ছা করলে লাগাতার পালন করতে পারে। আবার ইচ্ছা করলে আলাদা আলাদাও আদায় করতে পারে। অনেকে বলেছেন, প্রত্যেক সপ্তাহে দুইটি করে সিয়াম পালন করা উত্তম।
কাযা সিয়াম পালনের সাথে সাথে শাওয়ালের নফল সিয়ামের নিয়ত করা যাবে কি না? এই প্রশ্নের উত্তর হলো, এতে করে কাযা আদায় হবে, তবে নফল সিয়াম আদায় হবে না এবং নফল সিয়ামের ছাওয়াবও পাওয়া যাবে না। সুতরাং শাওয়ালের ছয় সিয়ামের নিয়তে এগুলো পালন করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নফল সিয়ামগুলো পালনের তাউফীক দান করুন। আমীন।