আল্লাহর সৃষ্টি এই পৃথিবীতে প্রায় ৭০০ কোটি মানুষের বসবাস। পৃথিবী জুড়ে বিস্তৃত এই মানুষ বিভিন্ন গোত্র, জাতি, শ্রেণি, বর্ণ ও ধর্মে বিভক্ত। প্রত্যেকে জাতি-গোষ্ঠীর রয়েছে আলাদা সংস্কৃতি, সভ্যতা-কালচার। সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূূর্ণ অংশ ভাষা। সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের কারণে ভাষারও রয়েছে হরেক কিসিম।
প্রত্যেক জাতি তাদের নির্দিষ্ট শব্দ ব্যবহার করে আপনজনদের পরিচিত অপরিচিতদের অভ্যর্থনা বা গ্রিটিংস জানিয়ে থাকেন। কেউ হাই-হ্যালো, কেউবা গুড মর্নিং, গুড ইভিনিং গুড আফটারনুন বলে থাকেন। আবার কেউ নমস্কার, নামাস্তে, আদাব ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে অভ্যর্থনা জানান।
তবে সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও অর্থবহ শব্দ হচ্ছে “আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহু” যার মাধ্যমে মুসলমানরা অভ্যর্থনা বা গ্রিটিংস দিয়ে থাকেন। এবং এই সালাম দেওয়া ভাল কাজের মধ্যে অন্যতম একটি।
সালাম এর প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহ প্রদান
আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাজি. বলেন,
এক ব্যক্তি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করল, ‘ইসলামের কোন কাজ সবচেয়ে উত্তম?’ তিনি বললেন, লোকদের খানা খাওয়ানো এবং পরিচিত অপরিত লোকদের সালাম দেয়া। (বোখারি, হাদিস নং ২৮)
আনাস রাজি. বলেন,
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সালাম দিতেন, তিনবার সালাম দিতেন। আর যখন কোন কথা বলতেন তখন তা তিনবার বলতেন। (বুখারী, হাদিস নং ৯৪)
উল্লিখিত হাদিস থেকে বোঝা যায় যে সালাম কত গুরুত্বপূর্ণ। মিষ্টি মুখে মুচকি হেসে সালাম দিলে মন যেন প্রশান্তিতে ভরে যায়। আল্লাহর রহমত যেন সাথে সাথেই বর্ষিত হয়। আর এই রহমতের বারিধারায় পরস্পরের হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে মিল- মহব্বত, ভালোবাসা, হৃদ্যতা বৃদ্ধি পায়। আত্মীয়তার বন্ধন আরও মজবুত হয়।
সালামে ব্যবহৃত তিনটি শব্দের সারমর্ম
এক. আস্সালাম (السلام)
“আস-সালাম”, আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের একটি।
সালাম অর্থ : শান্তি, নিরাপদ। অর্থাৎ আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক।
দুই. রাহমাতুল্লাহ (رحمة الله)
অর্থাৎ আল্লাহর দয়া ও রহমত আপনার উপর বর্ষিত হোক।
তিন. বারাকাতুহু (بركاته)
অর্থাৎ আপনার উপর বরকত নাযিল হোক।
এই সালামের মাধ্যমেই জান্নাতীদের অভ্যর্থনা জানানো হবে। এটা আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত কিন্তু আমরা এর কদর কোনভাবেই বুঝি না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, ছোট- বড় সবাইকে সালাম দিতেন এবং সালাম এর প্রচার প্রসার করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের সাথে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলতে হয় যে ,আমরা এমন জান্নাতি শব্দ কে বাদ দিয়ে পশ্চিমা আমদানি শব্দ “হেই ব্রু”, “হাই বেবি”, “হাই বাড্ডি”,”হাই ডুড” ইত্যাদি গ্রহণ করেছি। এগুলো বললে আমরা স্মার্ট। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শিখানো জান্নাতি অভ্যর্থনা শব্দ ” আস্সালামু আলাইকুম” , বললে আমরা জামায়াত ও জঙ্গিবাদ ।
তাইতো মনে হচ্ছে, ক্রমাগত আমরা আল্লাহর রহমত ও বরকত থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।
আল্লাহ আমাদের ইসলামবিরোধী সমস্ত অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে রুখে দেওয়ার তৌফিক দান করুন এবং সালাম এর প্রচার প্রসার করার তৌফিক দান করুন। আমিন।
Like this:
Like Loading...
Leave a comment