তারেকুল ইসলাম
পূজা বা উপাসনার উদ্দেশ্যহীন প্রাণী-ভাস্কর্য বা মনুষ্য-ভাস্কর্য বানানোর অনুমোদন ইসলামে থাকলে সর্বপ্রথম হযরত মুহাম্মদ সা-এর ভাস্কর্যই বানানো হতো। এই সিম্পল বিষয়টা সেকুলাঙ্গাররা বুঝে না কেন! এমনকি আজ রাসূল সা.-এর ভাস্কর্য বানানোর চেষ্টা কেউ করলেও সেটা আরো জোরেশোরে প্রতিরোধ করা হতো।
আর চলমান এই ভাস্কর্য বিরোধিতার সাথে শিল্পচর্চার কোনো সংযোগ নাই। কারণ, প্রাণী-ভাস্কর্য বাদে শালীন ও সুস্থধারার নান্দনিকতা, শিল্পকলা ও স্থাপত্যকলা চর্চার ব্যাপারে ইসলামে কোনো আপত্তি নেই। এক্ষেত্রে ওলামায়ে কেরামেরও কোনো আপত্তি আগেও ছিল না, এখনো নেই।
প্রাণী বা মনুষ্য ভাস্কর্য বানানোটা উপাসনার উদ্দেশ্যে না হলেও এতে শেরেকির সুযোগ আছে। ধরুন, মরহুম শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য কিংবা জিয়াউর রহমানের ভাস্কর্য তৈরি হলে তাদের সেই মূর্তিসমূহের প্রতি যেই আবেগ ও ভক্তি তৈরি হবে, সেটা শিরকের মধ্যেই পড়বে। কিংবা যেই আবেগ ও ভক্তি থেকে তাদের ভাস্কর্য তৈরি করা হবে, সেটাও শেরেকের প্রকারভেদে অন্তর্ভুক্ত। শেরেকের প্রকারভেদ জানা থাকলে প্রাণী-ভাস্কর্যের সমস্যাগুলো বুঝতে আরো সহজ হয়।
উদাহরণস্বরূপ: সম্প্রতি সংসদে চিত্রনায়ক ফারুক শেখ মুজিবকে নিয়ে শেরেকী কথাবার্তা বলেছেন। তিনি বলছিলেন, “আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধু এই মহান সংসদে আসেন। আমাদের তিনি দেখেন। আমাদের কথা শোনেন। কখনো তিনি অবাক হয়ে যান। কখনো তিনি হাসেন। কখনো আমাদের মাথায় তিনি হাত রেখে বলেন, এটা তোর ভুল হচ্ছে, শুধরে নে।….”
এছাড়া কিছুদিন আগে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ বা ছাত্রলীগের একটি বিক্ষোভে, “মুজিব আমার চেতনা, মুজিব আমার বিশ্বাস” স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। এগুলোকে আমি ‘সেকুলার শেরেক’ বলি।
চিত্রনায়ক ফারুকসহ এরা তো অধিকাংশই মুসলমান। তবুও এদের মুখে স্পষ্ট শেরেকী কথাবার্তা ও স্লোগান শোনা গেলো।
এবার অনুমান করুন, ভাস্কর্য তৈরি করার বিপদটা কী! এরা বরং এসব করে বঙ্গবন্ধুকেও কবরে বিপদে ফেলছে।
মোদি একবার বাংলাদেশ সফরে এসেছিল। তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাসায় বঙ্গবন্ধুর বিশাল প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে মাথা নুইয়ে নমস্কার ভঙ্গিতে ভক্তি ও শ্রদ্ধা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এসব তো ইসলামে সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। এগুলো সেকুলার জাহেলিয়াত।
প্রসঙ্গক্রমে মনে পড়লো, ২০১৩ সালে শাহবাগ আন্দোলনে জাফর ইকবাল একবার বক্তৃতার একপর্যায়ে বলে ফেললেন যে, “হুমায়ূন আহমেদ আমাদেরকে উপর থেকে দেখছেন।” এটাকেও আমি সেকুলার শেরেক বলি। এরা প্রগতিশীল ও সেকুলার হয়েও এসব কুসংস্কার লালন করেন, আবার নিজেদের বিজ্ঞানবাদী দাবি করেন। পুরাই স্ববিরোধী, ভণ্ড।
এছাড়া, সেকুলার জাহেলিয়াতের বিরুদ্ধে আমাদের কথা বলতে হবে। শহিদ মিনারে ফুল দিয়ে পবিত্রতার সহিত ফুলার্ঘ্য প্রদানও আধুনিক সেকুলার জাহেলিয়াত।
অন্যদিকে, রাষ্ট্র যেমন সেকুলার সাজে, আবার একইসাথে নিজেকে সর্বেসর্বা একক কর্তৃত্ববাদী খোদা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে। এটাও সেকুলার শেরেক। সেইদিন বেশি দূরে নয়, এই আধুনিক রাষ্ট্র নামক সেকুলার জাহেলি মূর্তি ভেঙে ইসলামী শাসনকাঠামো ও রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে, ইনশাআল্লাহ।
লেখক: কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।